তারাবীহ নামায ২০ রাকায়াত এর দলিলঃ

তারাবীহ নামাযঃ

তারাবীহ শব্দটির মূলতঃ আরবী । এর বাংলা রুপ ‘তারাবী’ যার অর্থ হলো – বিশ্রাম গ্রহন করা । এ শব্দের ব্যাখ্যায় হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন تراويح শব্দটি ترويحة শব্দের বহুবচন । ترويحة অর্থ একবার বিশ্রাম গ্রহন করা । যেমন تسليمة শব্দের অর্থ একবার সালাম দেওয়া ।রমাদ্বান মাস উনার বরকতময় রজনীতে জামা’আতের সঙ্গে যে নামাজ পড়া হয় তাকে সালাতুত তারাবীহ বলে । এ নামকরণের কারণ হচ্ছে যখন থেকে সাহাবা-এ-কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এ নামায সম্মিলিতভাবে আদায় করতে আরম্ভ করেন তখন থেকেই তারা প্রতি দু’সালামের পর অর্থাৎ চার রাকাতের পর বিশ্রাম নিতেন ।

[সুত্রঃ ইবনু হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, আহমাদ ইবনু আলী (৮৫৫ হিঃ),ফাতহুল বারী, (বৈরুত, দারুল মারিফা), প্রকাশকাল ১৩৭৯, খন্ড ৪, পৃঃ ৫০]

আল্লামা বদরুদ্দীন আঈনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

تراويح শব্দটি ترويحة এর বহুবচন । ترويحة এর বহুবচন ترويحات ও হতে পারে । মূলে এর অর্থ হচ্ছে বিশ্রাম গ্রহণ করা । প্রতি চার রাকাতের পর লোকেরা কিছু সময় বসার মাধ্যমে বিশ্রাম গ্রহন করত বলেই তাকে তারাবীহ নামকরণ করা হয় । পরবর্তীতে রুপকভাবে চার রাকাতকেই এক তারবীহা বলা হত ।

[উমদাতুল ক্বারী শরহে সহীহুল বুখারীঃ আল্লামা বদরুদ্দীন আঈনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মূলফাত প্রথম প্রকাশকাল ১৭ই এপ্রিল ২০০৬) খন্ড ১৭, পৃঃ ১৫০]

আল্লাম ইবনে নুযাইম আল মিসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফঃ৯৭০ হিঃ) বলেন-

تراويح শব্দটি ترويحة শব্দের বহুবচন । এর মাসদার হচ্ছে الاستراحة যার অর্থ বিশ্রাম গ্রহন করা । প্রতি চার রাকাতের পর লোকেরা কিছু সময় বসার মাধ্যমে বিশ্রাম গ্রহণ করত বলেই তাকে তারাবীহ নামকরন করা হয় । পরবর্তীতে রুপকভাবে চার রাকাতকেই এক তারাবীহা বলা । মুসান্নিফ ইহাকে সুন্নাত হিসাবে সাব্যস্ত করেছেন এবং হিদায়ার লেখক এটাকে বিশুদ্ধ বলেছেন । “খুলাসাহ” গ্রন্থে বর্নিত আছে- তারাবীহ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ তবে কেউ কেউ মতবিরোধ করেছে । ইমাম আবু ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তারাবীহ সম্পর্কে ইমামে আযম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি সুন্নাত হিসেবে সাব্যস্ত করেন । এবং তিনি বলেন হযরত ফারূকে আযম সাইয়্যিদুনা উমর ফারুক আলাইহিস সালাম যে পদ্ধতি চালু করেছেন তাতে তিনি বিদ’আতী নন ।

[ ইবনে নুযাইম আল মিসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (বিছালঃ৯৭০ হিঃ)-আল বাহরুর রায়েক শারহু কানযুদ দাকায়েক (বৈরুত, দারুল কুতুবুল ইলমীয়া প্রথম প্রকাশ ১৯৯৭) ৪র্থ খন্ড পৃঃ ৩১২]

পরিভাষায়ঃ

মাহে রমদ্বানের রাতে ইশার নামাজের পর (জামাতবদ্ধ হয়ে) যে সুন্নাত নামায পড়া হয়, তাকে تراويح বলে । যখন থেকে সাহাবায়ে কিরাম এ নামায সম্মিলিতভাবে আদায় করতে শুরু করেন, তখন থেকেই তারা প্রতি দু’সালাতের (অর্থাৎ চার রাকায়াতের) পর বিশ্রাম গহণ করতেন, তাই এ নামাযকে সালাতুত তারাবীহ বলা হয় ।

কেউ কেউ বলেন- তারাবীহ নামাযের মাধ্যমে মুমিন বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে চির সুখের আবাসন জান্নাত লাভের সৌভাগ্য অর্জনে সমর্থ হয় তাই একে তারাবীহ নামকরন করা হয়েছে।

[ইবনু হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি , আহমাদ ইবনু আলী (৮৫২ হিঃ), ফাতহুল বারী, (বৈরুত, দারুল মারিফা), খন্ড ৪, পৃঃ ২৫০ কামূসুল ফিকহী লুগাতান ওয়া ইসতিলাহান]

ফায়েদাহঃ

تراويح তারাবীহ শব্দটি বুঝাচ্ছে এই নামাযের রাকাত সংখ্যা ৮ নয়, ৮ এর অধিক । কেননা تراويح শব্দটি বহুবচন । আরবী ভাষায় একবচন দ্বিবচন এরপর বহুবচন । এজন্য তিন বা ততোধিক বুঝাতে বহুবচন ব্যবহৃত হয় । তাহলে অন্ততঃ তিন ترويحة হলে ভাষাগত দিক থেকে একে ترويحة বলা যায় । তাহলে চার রাকাত = এক তারাবীহা (…), আট রাকাত = দুই তারাবীহা, আর বারো বা ততোধিক রাকাত = ৩ তারাবীহা ।

তারাবীহ নামাজের বিধানঃ

আল্লামা ইবনে নুযাইম আল মিসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,“তারাবীহ নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।”

[আল বাহরুর রায়েক শারহু কানযুদ দাকায়েক (বৈরুত দারুল কুতুবুল ইলমীয়া প্রথম প্রকাশ ১৯৯৭) ৪র্থ খন্ড পৃঃ ৩১২]

আল মাওসেলী আল হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “তারাবীহ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ । কেননা নূরে মুজাসসাম ,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কয়েক রাত তারাবীহ নামায আদায় করেছিলেন।”

[আল ইখতিয়ার লি তা’লীলিল মুখতার ১ম খন্ড পৃঃ ৭৪]

আল্লামা যুবাইদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে তারাবীহ নামায সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ । কেননা নূরে মুজাসসাম ,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- আমি তোমাদের জন্য কিয়ামুল লাইল (তারাবীহ) কে সুন্নাত করলাম ।

[আল জাওয়াহারাতুন্নাইয়্যারাহ ১ম খন্ড পৃঃ ৩৮৪]

মূলকথাঃ

তারাবীহ নামায নারী পুরুষ সকলের জন্য সুন্নাতের মতো সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ । কেননা খুলাফায়ে রশিদীন আলাহিমুস সালাম গুরুত্বের সাথে তা আদায় করেছেন । আর তা ইশার নামাযের পরে বিতর নামাযের পূর্বে আদায় করতে হয় ।

১) জামা’আতে ২০ রাকাত আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ

২) একা পড়লেও ২০ রাকাত সুন্নাত

৩) কুরআন মাজীদ খতম করা সুন্নাত

৪) সূরা তারাবীহ পড়লেও ২০ রাকাত আদায় করা সুন্নাত

৫) মহিলাদের জন্য ২০ রাকাত আদায় করা সুন্নাত

[ আদ দুররুল মুখতার, আল মুহিত, মুলতাকুল আবহার]

২০ রাকাত তারাবীহ সমর্থনে দলীল সমূহঃ পর্ব ১

দলিল-১

হযরত ইয়াযিদ বিন খুসাইফাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত সাঈব ইবনে ইয়াযীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন, “খলীফা সাইয়্যিদুনা উমর ফারুক আলাইহিস সালাম হযরত উনার আমলে (রমাদ্বান মাসে) মুসলমান সমাজ ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায এবং বিতরের নামাযও পড়তেন।”

[আস সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী-২/৪৯৬

‘মা’রেফত-উস-সুনান ওয়াল্ আসার’, ৪র্থ খণ্ড, ৪২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৫৪০৯]

হাদিসের মান সম্পর্কেঃ

ইমাম বায়হাকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি অপর এক সনদে অনুরূপ একখানি রেওয়ায়াত লিপিবদ্ধ করেছেন।হযরত সাঈব ইবনে ইয়াযীদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন, “খলীফা সাইয়্যিদুনা উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার শাসনামলে রমদ্বান মাসে মুসলমানগণ ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায পড়তেন।” তিনি আরও বলেন, “তাঁরা মি’ঈন পাঠ করতেন এবং খলীফা হযরত উসমান ইবনে আফফান আলাইহিস সালাম উনার শাসনামলে (নামাযে) দণ্ডায়মান থাকার অসুবিধা থেকে স্বস্তির জন্যে তাঁরা নিজেদের লাঠির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন।”

[ইমাম বায়হাকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি রচিত ‘সুনান আল-কুবরা’, ২য় খণ্ড, ৬৯৮-৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৪৬১৭]

১।ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “হাদীস শরীফটির সনদ সহীহ।”

[ ‘আল-খুলাসাতুল আহকাম’, হাদীস নং ১৯৬১,

আল মাজমু,৪/৩২]

২।ইমাম যায়লায়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘নাসবুর রায়াহ’ কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।

রেফারেন্সঃ

নাসবুর রায়াহ-২/১৫৪

৩/ইমাম সুবকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘শারহুল মিনহাজ’ নামক কিতাবে হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।

৪/ ইমাম ইবনুল ইরাকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘তারহুত তাছরীব’ কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।

রেফারেন্সঃ

তারহুত তাছরীব-৩/৭১৬

ইমাম বদরুদ্দীন আইনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “ইমাম বায়হাকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি সহীহ সনদে সাহাবী হযরত সাঈব ইবনে ইয়াযীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন যে খলীফা হযরত উমর ফারূক আলাইহিস সালাম উনার শাসনামলে মুসলমান সমাজ ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায পড়তেন এবং তা খলীফা হযরত উসমান আলাইহিস সালাম উনার শাসনামলেও প্রচলিত ছিল।

[উমদাতুল ক্কারী শরহে সহীহ আল বুখারী’, ৫ম খণ্ড, ২৬৪ পৃষ্ঠা; দারুল ফিকর,বৈরুত,লেবানন হতে প্রকাশিত]

৫।ইমাম বদরুদ্দীন আইনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘উমদাতুল কারী’ কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।

[উমদাতুল কারী-৭/১৭৮]

৬।লা মাজহাবীদের গুরু আল-মুবারকপুরীও এই হাদীসটির সনদকে ’সহীহ’ বলেছে এবং এর পক্ষে ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সমর্থনের কথা উদ্ধৃত করেছে।

[’তোহফাতুল আহওয়াযী’, ৩য় খণ্ড, ৪৫৩ পৃষ্ঠা; দারুল ফিকর, বৈরুত, লেবানন থেকে প্রকাশিত]

৭।ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “এই এ সনদে সকল রাবী তথা বর্ণনাকারী ’সিকা’ বা নির্ভরযোগ্য।”

[‘আসার আল-সুনান’, ২:৫৪]

৮।ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘আল মাসাবীহু ফী সালাতিত তারাওয়ীহ’ নামক কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।

[আল মাসাবীহু ফী সালাতিত তারাওয়ীহ-২৮]

৯।ইমাম মুল্লা আলী কারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘শারহুল মুয়াত্তা’ নামক কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।

১০। ইমাম নীমাওয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘আসারুস সুনান’ নামক কিতাবে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

২০ রাকাতের পক্ষের হাদীসটি নিয়ে আলবানীর অভিযোগঃ

________________________________________________

আলবানী বলে,

হাদীসটির বর্ণনাকারী ইয়াযিদ বিন খুসাইফাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে নিয়ে সমালোচনা রয়েছে।

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, তিনি মুনকারুল হাদীস।

ইমাম যাহাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, তার রেওয়ায়াতে ইদতেরাব রয়েছে। একবার তিনি বলেছেন, ২১ রাকাতের কথা, আবার অন্যস্থানে তিনি বলেছেন ২৩ রাকাতের কথা। তাই উনার কথা গ্রহনযোগ্য নয়।

প্রথম জবাবঃ

___________________________________________

এ অভিযোগ মোটেও গ্রহনযোগ্য নয়, তবুও তর্কের খাতিরে যদি মেনে ও নেই, তবে এক্ষেত্রে আমাদের জবাব হচ্ছে,

কোন একটি হাদীসের অর্থ যখন সকলের নিকট গ্রহণীয় হয়ে যায়, তখন সে হাদিসের সনদের বিশুদ্ধতার প্রয়োজন হয় না। যেমনভাবে ইয়াযিদ বিন খুসাইফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর হাদীস। এ হাদীসের অর্থ এতই গ্রহণযোগ্য যে এর সনদের অনুসরণের প্রয়োজন হয় না।

কয়েকটি দালিলিক উদাহরণ দিচ্ছিঃ

ইমাম খাতীব বাগদাদী “কাযা” সংক্রান্ত মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু এর হাদীস সম্পর্কে বলেন,

‘আহলে ইলম এ হাদিসের অর্থ কবুল করেছেন এবং এর দ্বারা দলীল প্রদান করেছেন’। যদিও এর সনদ বিশুদ্ধ নয়।

রেফারেন্সঃ

১/আল ফাকীহু ওয়াল মুতাফাক্কিহু

২/আত তালখীসুল হাবীর- ৪/৮৩

৩/আল মুগনী-৯/৫৩

ইমাম সুয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কোন হাদিসের সনদ বিশুদ্ধ না হলে যদি মানুষ এর অর্থকে কবুল দ্বারা তালাক্কী করে, তবে সে হাদীসকে সহীহ বলে হুকুম দেয়া হয়।

রেফারেন্সঃ

তাদরীবুর রাওয়ী ফী শারহি তাকরীবিন নাওয়ায়ী- ৬০

ইমাম ইবনু আব্দিল বার ‘আল ইসতিযকার’ নামক কিতাবে বলেন, ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ‘বাহর’ এর হাদিসকে (সমুদ্রের পানি পবিত্র) সহীহ বলেছেন, অথচ হাদীস বিশারদগণ এর সনদকে বিশুদ্ধ বলেন নি।

রেফারেন্সঃ

আল ইসতিযকার

ইমাম ইবনু আব্দিল বার।

৫/১৫৭

ঠিক একই ভাবে হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দীনার হচ্ছে ২৪ কীরাত- এ হাদীসটির অর্থের উপর সকলের ইজমা হওয়ার কারনে এর সনদের পর্যালোচনা করার কোন প্রয়োজন নেই। এটা গ্রহনযোগ্য।

রেফারেন্সঃ

আত তামহীদ

হাফিয ইবনু আব্দিল বার।

** তেমনি ২০ রাকাতের আলোচ্য হাদীসটি ‘মুতালাক্কা বিল কাবুল’ হয়েছে। সকলের নিকট এটার আম গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে।

ইমাম ইবনু আব্দিল বার রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ২০ রাকাতের বিষয়টি সহীহ তথা বিশুদ্ধ। যা উবাই বিন কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে। এ নিয়ে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে কোন প্রকারের এখতেলাফ ছিলনা।

***ইমাম তিরমিযি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত উমর এবং আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু এবং অন্যান্য সাহাবীদের থেকে বর্ণিত ২০ রাকাত তারাবীহ সালাতের উপর অধিকাংশ উলামায়ে কেরামগণ একমত হয়েছেন।

এমন কথাই বলেছেন ।ইমাম সুফিয়ান সাওরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি,ইমাম ইবনুল মুবারাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি,ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, এভাবেই আমি মক্কা মুকাররামাতে লোকজনকে ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত পড়তে দেখেছি।

রেফারেন্সঃ

জামিউত তিরমিযি।

১/শারহুস সুন্নাহ-৪/১২৩

২/আল মাজমু-৪/৩১

৩/মুখতাসারু কিয়ামিল লাইলি ওয়া কিয়ামি রামাদান- ৯৫

৪/ফাতহুল বারী- ৪/২৫৩

***ইমাম ইবনু রাশীদ বলেন,

ইমাম মালিকে রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার দুটি কাওলের একটি, ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি, শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, আহমাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, এবং আবু দাঊদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি সবাই বিতির ব্যতীত ২০ রাকাত তারাবীহ সালাতের পক্ষে রায় প্রদান করেছেন।

রেফারেন্সঃ

বিদায়াতুল মুজতাহিদ ।

***ইমাম ইবনু আব্দিল বার রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এটা হচ্ছে জমহুর (অধিকাংশ) উলামাদের মত। এবং আমাদের নিকট ও এটাই চুড়ান্ত রায়।

***হাফিয ইবনু ইরাকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও একই কথা বলেছেন, তিনি বলেছেন,

২০ রাকাতের এ মতটি ই গ্রহন করেছেন ইমাম আবু হানীফা, শাফেয়ী, আহমাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহিম এবং জমহুর উলামায়ে কেরাম।

রেফারেন্সঃ

১/তারহুত তাছরীব

২/আল মাজমু-৪/৩১

৩/শারহু মুনতাহাল ইরাদাত-১/২৩১

***ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ ও একই কথা বলেছেন, তিনি বলেছেন,

এটা সহীহ সুত্রে প্রমাণিত যে রমাদ্বান মাসে হযরত উবাই বিন কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু মানুষদের নিয়ে ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করতেন, এবং তিন রাকাত বিতির সালাত আদায় করতেন।এবং অনেক উলামায়ে কেরাম এটাকে সুন্নাহ বলে ফতোয়া দিয়েছেন, যেহেতু উবাই বিন কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু মুহাজির এবং আনসার সাহাবীদেরকে নিয়ে এরকম ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করেছেন। তখন কেউ এ নিয়ে কোন প্রতিবাদ করেন নি।

রেফারেন্সঃ

মাজমু উ ফাতাওয়া-৩২/১১৩

***ওহাবি মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা মুহম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব নজদীর ও একই কথাঃ

“হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার যামানায় উবাই বিন কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার ইমামতিতে ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করা হত”।

রেফারেন্সঃ

১/মাজমু উল ফাতাওয়া আল নাজদিয়্যাহ

২/মুখতাসারুল ইনসাফ ওয়াশ শারহিল কাবীর- ১/১৫৭

***হাম্বালী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ইমাম ইবনু কুদামা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ২০ তারাবীহ সালাতের উপর প্রায় ইজমা হয়ে গেছে।

রেফারেন্সঃ

আল মুগনী-২/১৬৭

আলবানীর অভিযোগঃ রাবী দুর্বল

________________________

২০ রাকাতের পক্ষের একটি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীসটিকে ইমামগণ সহীহ বলেছেন, কিন্তু আলবানী তা মানতে পারেননি। কেন? তিনি বলেছেন, হাদিসের একজন বর্ণনাকারী ইয়াযিদ বিন খুসাইফা হচ্ছেন একজন সমালোচিত রাওয়ী। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। সুতরাং এ বর্ণনাকারীর দুর্বলতার কারণে হাদিসটি গ্রহনযোগ্য নয়।

দ্বিতীয় জবাবঃ

__________________

জি, ইমাম আবু দাউদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে একটি বর্ণনা রয়েছে যে, ইমাম আহমাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। কিন্তু ইমাম যাহাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, আসরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর বর্ণনা থেকে ইমাম আহমাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁকে সিকাহ তথা নির্ভরযোগ্য বলে মত প্রকাশ করেছেন।

এছাড়াও যেসকল ইমামগন উনাকে সিকাহ বলেছেন, তাদের কথা উল্লেখ করছি-

১/ ইমাম আবু হাতিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে সিকাহ তথা নির্ভরযোগ্য বলেছেন।

২/ ইমাম ইবনু হিব্বান রহমাতুল্লাহি আলাইহি নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের নিয়ে লেখা কিতাব ‘কিতাবুস সিকাত’ এ উনার নাম উল্লেখ করেছেন।

৩/ ইবনু মায়ীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, তিনি সিকাহ। উনার কথা নির্দ্বিধায় দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য।

৪/ ইমাম নাসাঈ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।

৫/ ইমাম যাহাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ‘আল কাশিফ’ নামক কিতাবে তাঁর নিজের মন্তব্য প্রকাশ করেছেন, বলেছেন, তিনি সিকাহ।

৬/ ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।

৭/ ইমাম ইবনু শাহিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে কখনো বলেছেন, তিনি নির্ভরযোগ্য। আবার কখনো বলেছেন, আমি উনাকে ভাল ছাড়া অন্য কিছু জানিনা।

বিস্তারিত জানতে রেফারেন্সগুলো দেখুন-

১/ তারীখু আসমা ইস সিফাত-২৫৬-২৫৮

২/ মীযানুল ই’তিদাল-৪/৪৩০

৩/ তাকরীবুত তাহযীব- ২/৩৬৪-৩৬৭

আর ইমাম আহমদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি মন্তব্য যে, ইয়াযিদ বিন খুসাইফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি মুনকারুল হাদীস যা আলবানী উল্লেখ করে এবং কারণ দেখিয়ে ঐ হাদিসটিকে বাতিল বলে ঘোষনা দিলেন, তার জবাব আমরা ইবনু হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি ক্বওল দিয়ে প্রদান করবো।

ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এ বর্ণনাটি উল্লেখ করে বলেন, মূলতঃ ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইয়াযিদ বিন খুসাইফাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ব্যাপারে ‘মুনকারুল হাদীস’ এজন্যই বলেছেন, কারণ ইয়াযিদ বিন খুসাইফাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন হাদীসের ব্যাপারে উনার সমকালীনদের চেয়ে ব্যতিক্রম। আর এ অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে ইমাম আহমাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে মুনকারুল হাদীস হিসেবে মন্তব্য করেছেন। এখানে তিনি হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে উনার কোন সমালোচনা করেননি।

রেফারেন্সঃ

১/ হাদয়্যুস সারী -৪৩৭-৪৫৩

২/ আর রাফউ ওয়াত তাকমীল-১৪৫

৩/ লিসানুল মুহাদ্দিসীন-৫/১৯৪

আলবানীর অভিযোগঃ হাদীসে ইদতেরাব বিদ্যমান

____________________________________

আলবানী ২০ রাকাত তারাবীহ সংক্রান্ত হাদীসকে দুর্বল প্রমাণ করতে গিয়ে বলেছেন, ইয়াযিদ বিন খুসাইফাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তো একেক সময় একেক কথা বলেছেন, কখনো বলেছেন, তারাবীহ সালাতের রাকাত ২১, আবার কখনো বলেছেন-২৩। সুতরাং উনার এমন অবস্থার কারণে উনার বর্ণনার হাদীস গ্রহনযোগ্য নয়। বরং ১১ রাকাত তারাবীহ সালাতের হাদীসটিই সহীহ।

জবাবঃ

____________

এক্ষেত্রে আমরা হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কথা দিয়ে জবাব দিতে পারি, আর তা হচ্ছে, ২১ আর ২৩- এ সংখ্যার পার্থক্য মূলতঃ তারাবীহ সালাতের সংখ্যার ব্যাপারে নয়, বরং এটা হচ্ছে বিতির সংক্রান্ত। অর্থাৎ তিনি কখনো বিতির পড়েছেন ১ রাকাত, আবার কখনো তিন রাকাত। আর এ কারনেই ২১ এবং ২৩ রাকাতের কথা ইয়াযিদ বিন খুসাইফাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেছেন।

রেফারেন্সঃ

ফাতহুল বারী-৪/২৫৩

আর এমন ইদতিরাব কোন হাদীসকে দুর্বল বানাতে পারেনা।

রেফারেন্সঃ

তাদরীবুর রাবী-১/২৬৫

তাছাড়া এটাকে যদি বড় ইস্যু ধরা হয়, তাহলে আলবানী নিজের ফাঁদে নিজেই ধরা খাবে।

কারণ,আলবানী ১১ রাকাত তারাবীহ সালাতের পক্ষে যে হাদীসের প্রশংসা করতে করতে পেরেশান, সে হাদীসের বর্ণনাকারী মুহম্মদ বিন ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও কিন্তু একই কাজ করেছেন! এক রেওয়ায়াতে তিনি বলেছেন ১১ রাকাত, আবার অন্য রেওয়ায়াতে বলেছেন, ১৩ রাকাত!!

বিস্তারিত দেখুন-

মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক-৪/২৬০

এর মানে আলবানী এ পয়েন্টে বেশী বাড়াবাড়ি করলে নিজের শক্তিশালী দলীল নিজের ফতোয়াতেই দুর্বল হয়ে যাবে।

তো, আলবানী সাহেব ২০ রাকাতের সহীহ হাদিসটিকে দুর্বল বানাতে যে দুটি তলাবিহীন অভিযোগ তুলেছিলেন, তাঁর জবাব দেয়া হলো। এবং এ জবাবের মাধ্যমে হাদিসটির বিশুদ্ধতা সম্পর্কে আর কোন সন্দেহ থাকলোনা।

আর এ সহীহভাবে প্রমাণিত হাদীস দ্বারা এটাও প্রমাণিত হয়ে গেল, সাহাবায়ে কেরাম তারাবীহ সালাত ২০ রাকাত আদায় করতেন।

কোন সন্দেহ নেই। ইনশা আল্লাহ।

সাহাবায়ে কেরামের আমল নিয়ে আরেকটি কথা বলে শেষ করছি-

ইমাম আতা বিন রাবাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- আমি সাহাবায়ে কেরামকে রমাদ্বান মাসে ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত এবং তিন রাকাত বিতির আদায় করতে পেয়েছি।

রেফারেন্সঃ

১/মুখতাসারু কিয়ামিল লাইলি ওয়া কিয়ামি রামাদান- ৯৫

২/ ফাতহুল বারী-৪/২৫৩

ইমাম আতা রহমাতুল্লাহি আলাইহি হচ্ছেন একজন প্রসিদ্ধ তাবেয়ী। তিনি ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ ফকীহ এবং নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী।

রেফারেন্সঃ

তাকরীবুত তাহযীব-২/২২

আলবানীর গুরুতর অভিযোগঃ

__________________________

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১১ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করেছেন। এটাই সীমাবদ্ধ। এ সংখ্যাই নির্দিষ্ট। তাই এর থেকে বেশী তারাবীহ সালাত আদায় করা হারাম।

রেফারেন্সঃ

সালাতুত তারাবীহঃ২৫

আমাদের জবাবঃ

____________

আলবানীর এ কথাটিই প্রমাণ করছে, সে একজন জাহিল ছিল। হাদীসের পর্যাপ্ত জ্ঞান তার ছিলনা। অথবা মানসিক অসুস্থ। কোন সুস্থ মাথার আলেম এমন কথা বলতে পারেনা, অসম্ভব।

আমার এ কথার সত্যতা নিম্নপ্রদত্ত দলীল দ্বারা প্রমাণিত হয়ে যাবে, ইনশা আল্লাহ।

***হযরত আয়েশা সিদ্দিকা আলাইহাস সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে যখন নফল সালাত আদায় করার জন্য ঘুম থেকে উঠতেন, তখন তিনি দু রাকাত হালকা সালাত (খাফীফাহ) আদায় করতেন।

রেফারেন্সঃ

যাদুল মা’আদ-১/৩২৫-৩২৭

***হযরত আবু সালামাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আয়েশা সিদ্দিকা আলাইহাস সালামকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি জবাব দিলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১৩ রাকাত সালাত আদায় করতেন।

রেফারেন্সঃ

সহীহ মুসলিম/৭৩৮-১২২০

তাহলে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়ে গেল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সালাতের নির্ধারিত সংখ্যা নেই। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংখ্যায় তিনি সালাত আদায় করেছেন।

ইবনু তাইমিয়ার ফতোয়ায় ধরাশায়ী আলবানীঃ

____________________________________

ইবনু তাইমিয়াহ (আলবানীদের প্রধান সম্মানিত শায়েখ) বলেছে,

রমাদ্বান মাসে তারাবীহ সালাত আদায়ের ব্যাপারে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন সংখ্যা নির্ধারণ করেন নি। বরং তিনি রমাদ্বান এবং অন্যান্য মাসে ১৩ রাকাতের বেশী সালাত আদায় করতেন না। কিন্তু রাকাতগুলো দীর্ঘ হয়ে যেত। অতঃপর যখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হযরত উবাই বিন কা’ব রদিয়াল্লাহু আনহুর ইমামতিতে সবাইকে একত্রিত করলেন, তখন থেকে তিনি তাদের নিয়ে ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করতেন এবং তিন রাকাত বিতির সালাত আদায় করতেন। এবং তিনি রাকাত অনুসারে কিরাত সংক্ষিপ্ত করতেন। কেননা এটা মুক্তাদীদের জন্য অধিকতর হালকা হতো।

অতঃপর সালফে সালিহীনের অনেকে চল্লিশ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করতেন এবং তিন রাকাত বিতির সালাত আদায় করতেন। অনেকে ৩৬ রাকাত আদায় করতেন এবং তিন রাকাত বিতির সালাত আদায় করতেন। এটা মূলতঃ মুসল্লীদের অবস্থার ভিন্নতায় উত্তমতা লাভ করে। যেমন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১১ রাকাত আদায় করেছেন, এটা উত্তম। আবার কেউ যদি এটা বহন করতেনূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না পারে এবং ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করে, তবে তাদের জন্য এটাই উত্তম। আর মূলত ২০ রাকাতের আমলটাই অধিকাংশ মুসলমানগণ করেছেন।

***এরপর ইবনু তাইমিয়্যাহ যে কথাটি বলেছেন, সেটাই আলবানী উপর পড়েছে, আর সেটা হচ্ছে-আর যে ব্যক্তি ধারণা করলো যে, তারাবীহ সালাতের নির্ধারিত সংখ্যা রয়েছে, এ সংখ্যা থেকে বাড়ানো বা কমানো যাবেনা, সে ব্যক্তি ভুল করলো।

রেফারেন্সঃ

মাজমু উ ফাতাওয়া-২/৪০১

কিন্তু ব্যাপার হলো, আলবানী তো ধারণা করেন নি, বরং শক্তভাবে ফতোওয়া দিয়ে বই লিখেছেন “সালাতুত তারাবীহ”। সেখানে সে স্পষ্ট ভাষায় শক্তভাবে ফতোয়া দিয়েছেন, ১১ রাকাতই নির্ধারিত। এর থেকে বেশী তারাবীহ সালাত আদায় করা হারাম। তাহলে ইবনু তাইমিয়্যাহ এর ফতোয়ায় আলবানী শুধু ভুলই করেন নি, বরং আরো মারাত্মক কাজ করেছেন।এ তো বললাম তাদের নিজেদের ফতোয়ায় তাদের নিজেদের মধ্যে মারামারি। যা তা অবস্থা!

১১ রাকাতের হাদীস নিয়ে কিছু কথাঃ

_________________________

হাদীসঃ

আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত,তিনি আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞেস করলেন ,রমাদান মাসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নামাজ কেমন ছিল? উত্তরে তিনি বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানে ও অন্যান্য মাসে বিতির সহ এগার রাকআতের বেশী পড়তেন না।

-সহীহ আল বুখারী।

পর্যালোচনা-

মূলতঃ এগারো রাকাতের সালাত তারাবীহ সালাত ছিলনা। এটা ছিল তাহাজ্জুদের সালাত। কারন-

১/ ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি হাদীসটিকে তাহাজ্জুদের সালাতের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন।

[সহিহ বুখারীঃকিতাবুত তাহাজ্জুদঃবাবু কিয়ামিন নাবিয়্যি সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা বিল লাইলি ফী রমাদ্বানা ওয়া গাইরিহী। ]

২/ইমাম মুসলিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি সালাতুল লাইল (তাহাজ্জুদ) এর অধ্যায়ে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।

[সহিহ মুসলিমঃবাবু সালাতিল লাইল]

৩/ ইমাম তিরমিযি রহমাতুল্লাহি আলাইহি জামিউত তিরমিযিতে ও একইভাবে উল্লেখ করেছেন।

[তিরমিযীঃবাবু মা জাআ ফী ওয়াসফি সালাতিন নাবিয়্যি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]

৪/ইমাম আবু দাঊদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি সুনানু আবী দাউদে হাদীসটিকে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন।[আবু দাউদ শরীফঃআবওয়াবু কিয়ামিল লাইল]

৫/ইমাম নাসাঈ রহমাতুল্লাহি আলাইহি সুনানু নাসাঈতে হাদীসটিকে তাহাজ্জুদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন।

[নাসায়ীঃকিতাবু কিয়ামিল লাইলি ওয়া তাতাওউইন নাহার]

লক্ষ্যণীয়,

সকল ইমামগন যেখানে হাদীসটিকে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন সেখানে হাদীসটি দ্বারা কোন প্রকারের সালাত উদ্দেশ্য, তা বোধহয় আর বলার অপেক্ষা রাখছেনা।

হাদীসটির ব্যাখ্যায় জামিউ তিরমিযির ব্যাখ্যা গ্রন্থে এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,

এখানে প্রশ্নকর্তা সাহাবী হযরত আয়েশা সিদ্দিকা আলাইহাস সালাম উনাকে রমাদ্বান মাসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সালাত কেমন ছিল-এ নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। মুলত প্রশ্নকর্তা সাহাবী রমাদ্বান মাস ছাড়া অন্যান্য মাসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাহাজ্জুদের সালাতের বিষয়টি জানতেন। তবে তিনি ধারণা করেছিলেন, রমাদ্বান মাসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হয়ত আরো বেশী রাকাত তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতেন, তাই এটা জানার জন্য তিনি প্রশ্নের মধ্যে রমাদ্বান মাসের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছেন।

রেফারেন্সঃ

আল কাউকাবুদ দুররিয়্যু আলা জামি’ইত তিরমিযি

খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৩

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান