হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দান খয়রাতের নমুনা

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالْمُتَصَدِّقِيْنَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ

“দান-খয়রাতকারী, যারা দান-খয়রাতকারী নর ও নারী।”

মূলতঃ উনারা খালিছ মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী। কেমন হবে দান-খয়রাতকারী? এ প্রসঙ্গে বলা হয়ে থাকে, হাজারো লাখো ওয়াকেয়া রয়ে গেছে। আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন-

أَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نَّتَصَدَّقَ وَوَافَقَ ذَلِكَ عِنْدِيْ مَالًا فَقُلْتُ الْيَوْمَ أَسْبِقُ أَبَا بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ إِنْ سَبَقْتَهٗ يَوْمًا

সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যখন তাবুকের যুদ্ধের ঘোষণা হয়ে গেল, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “তাবুকের যুদ্ধ করতে হবে, আপনারা যে যা পারেন, দান-খয়রাত করেন।”

أَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نَتَصَدَّقَ

মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আদেশ মুবারক করলেন, আপনারা দান-খয়রাত করুন-

وَوَافَقَ ذَلِكَ عِنْدِيْ مَالًا فَقُلْتُ الْيَوْمَ أَسْبِقُ أَبَا بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ ٍ إِنْ سَبَقْتَهٗ يَوْمًا

সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমার অনেক সম্পদ ছিল, তখন আমি খুব ধনী ছিলাম। আমি মনে মনে চিন্তা করলাম সারা জীবন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সাথে দান-খয়রাতে প্রতিযোগিতা করেছি, কখনো কামিয়াবী হাছিল করতে পারিনি। অর্থাৎ সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার থেকে বেশী দান-খয়রাত করতে পারিনি। আজকে আমার অবস্থা ভাল, আমি আশা করি এবার আমি সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার থেকে বেশী দান-খয়রাত করবো। এ চিন্তা করে তিনি উনার সম্পদ যা ছিল নিয়ে আসলেন।

قَالَ:فَجِئْتُ بِنِصْفِ مَالِيْ

তিনি বলেন, আমার যা সম্পদ ছিল তার অর্ধেক আমি নিয়ে আসলাম। অর্থাৎ উনার যা ছিল, তার অর্ধেক তিনি নিয়ে আসলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ-এ। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বুঝতে পারলেন। বুঝে জিজ্ঞেস করলেন-

مَا أَبْقَيْتَ لِأَهْلِكَ؟

“হে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! আপনি কি রেখে আসলেন পরিবারের জন্য?” قُلْتُ: مِثْلَهٗ ُ ‘হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমি আমার সম্পদের অর্ধেক এনেছি ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আর অর্ধেক রেখে এসেছি। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আর কোন কথা বললেন না। এদিকে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি অপেক্ষা করতে লাগলেন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি কি নিয়ে আসেন সেটা দেখতে হবে, উনি কি নিয়ে আসেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ঘোষণা শুনে বাড়ীতে চলে গেলেন, বাড়ীতে গিয়ে চিন্তান্বিত অবস্থায় তিনি চুপ করে বসে রইলেন।

উনার আহলিয়া (স্ত্রী) জিজ্ঞেস করলেন, “কি ব্যাপার আপনি চুপ করে বসে আছেন কেন? আপনার কি হয়েছে?” তিনি বললেন, “দেখুন আজকে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঘোষণা করেছেন, তাবুকের যুদ্ধ সংঘটিত হবে, যুদ্ধের জন্য খরচ করতে হবে। আমার কাছে এই মুহূর্তে কোন টাকা-পয়সা নেই, কি দিয়ে জিহাদের জন্য খরচ করবো সে জন্য চিন্তিত রয়েছি।” হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার যিনি আহলিয়া তিনি বললেন, “ঠিক আছে, টাকা-পয়সা না থাকুক, আমাদের যা আছে, সবকিছু নিয়ে যান।” এমনকি কোন কোন বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার আহলিয়া তিনি উনার বাড়ীর হাড়ি-পাতিল, ঘটি-বাটি, ঝাড়ু যতকিছু ছিল, সমস্তকিছু বস্তায় বেঁধে দিয়ে দিলেন। সবকিছু দিয়ে দিলেন। দিয়ে বললেন, “আপনি এটা নিয়ে যান।” হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি সেটা নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ-এ উপস্থিত হলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন-

وَأَتٰى أَبُوْ بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ بِكُلِّ مَا عِنْدَهٗ

হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি আসলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ-এ। উনার বাড়ীতে যা কিছু ছিল সমস্ত কিছু নিয়ে। এসে যখন সেই বস্তাটা রাখলেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বুঝতে পারলেন। বুঝতে পেরে বললেন, “হে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম!

مَا أَبْقَيْتَ لِأَهْلِكَ؟

“আপনি আপনার পরিবারবর্গের জন্য কি রেখে আসলেন?” হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন-

أَبْقَيْتُ لَهُمُ اللهَ وَرَسُولَهٗ

“ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি কিছুই রেখে আসি নাই। একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত আর মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত রেখে এসেছি, আর কিছুই রেখে আসি নাই।” সুবহানাল্লাহ! এখন চিন্তা ফিকির করেন। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন-

لَا أَسْبِقُهٗ إِلٰى شَيْءٍ أَبَدًا

আর জীবনে কখনো আমার পক্ষে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার থেকে বেশী দান-খয়রাত করা সম্ভব হবে না। তিনি যা ছিল সব নিয়ে এসেছেন। অতএব যাঁরা وَالْمُتَصَدِّقِيْنَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ

“দান-খয়রাতকারী, যারা দান-খয়রাতকারী নর ও নারী।” মূলতঃ তারাই হাক্বীক্বী মু’মিন।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান